Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লিচুগাছের পরিচর্যা ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা

লিচুগাছের পরিচর্যা ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা
মোঃ মাজেদুল ইসলাম (মিন্টু)

লিচু একটি  পুষ্টিকর, সুস্বাদু, আকর্ষণীয় ও লোভনীয় ফল। রঙে স্বাদে গুণে এ ফলের তুলনা হয় না। লিচুর মধ্যে জলীয় অংশ ছাড়াও আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, এ, বি১, বি২ ইত্যাদি আছে যা আমাদের  শরীরে পুষ্টি জোগায়। পাকা লিচু সবাই মিলে খুব মজা করে খাওয়া যায় বলে এর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে, তা ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য খুবই জনপ্রিয়। কৃষকদের অপরিকল্পিত বাগান, মানসম্পন্ন চারা/কলমের অভাব, বালাইব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যার অভাব, আবহাওয়াগত সমস্যা, সর্বোপরি কৃষকের দক্ষতার অভাবে কাক্সিক্ষত ফলন পেতে ব্যর্থ হয়।
অধিক ফলন পেতে হলে বছরব্যাপী লিচুগাছের পরিচর্যা করতে হবে। লিচু সংগ্রহের পর থেকেই পরিচর্যা শুরু করতে হয়।
জুন মাস (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) : এসময় লিচুর কলম    রোপণের উত্তম সময়। সেচের সুবিধা থাকলে আগস্ট-সেপ্টেম্বর  বা সারা বছরই লিচুর কলম রোপণ করা যায়। লিচুগাছের কাণ্ড থেকে শিকড় গজায় এজন্য গোড়া একটু মাটির নিচে দিতে হয়। পুরাতন বাগানের কিছু মাটি গর্তে মিশিয়ে দিলে গাছ সহজে মরে না। এ সময় বয়স্ক গাছে ফল সংগ্রহের পর পরই প্রুনিং বা অঙ্গছাঁটাই করতে হবে। গাছপ্রতি ৬০-৭০ কেজি জৈবসার, ১ কেজি           ইউরিয়া, ১.৫ কেজি ডিএপি, ৫০০-৬০০ গ্রাম এমওপি সার রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।
জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ) : এসময়ে গাছে নতুন কুঁশিপাতা গজাবে। পাতামোড়ানো পোকা ও লিফ মাইনর আক্রমণ করলে সাইপারমেথ্রিন এবং মাইটস নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারটিমেক/ওমাইট/ক্যালথেন সুনির্দিষ্ট মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) : বাগানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে নিষ্কাশন করতে হবে। কাণ্ড ছিদ্রকারী বা বাকল খেকো পোকা আক্রমণ করলে শক্ত কাঠি/স্পোক দিয়ে গর্ত পরিষ্কার করতে হবে। পেট্রোলে তুলা ভিজিয়ে গর্তে ঢুকিয়ে কাদামাটি দিয়ে গর্ত বন্ধ করতে হবে। অথবা সিরিঞ্জ দিয়ে কীটনাশক গর্তে প্রবেশ করাতে হবে ।
সেপ্টেম্বর (ভাদ্র-আশ্বিন) : হালকা চাষ দিয়ে বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। রোগাক্রান্ত/মরাডাল, পরগাছা, গাছের ভেতরের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। শেষ বৃষ্টির পর বাগান পরিষ্কার করে চুন ১ কেজি : তুতে                 ১ কেজি : পানি ১০ লি. একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ১-১.২ মি: উচ্চতা পর্যন্ত রঙ করতে হবে।
অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক) : হালকা চাষ দিয়ে মাটি আলগা করতে হবে। মাইটসের আক্রমণ হলে আক্রান্ত অংশ ভেঙে পুড়িয়ে/১ ফুট মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। মাকড়নাশক ও ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে ।
নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ): কাণ্ড হতে গজানো নতুন কুঁশি অপসারণ করতে হবে। এসময় মুকুল আসার আগ পর্যন্ত সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হবে। এখনই গাছের ১০-১২ ইঞ্চি পরিধির সব ডালে ২/৩ ইঞ্চি দূরত্বে ধারালো চাকু দিয়ে রিং পদ্ধতিতে বাকল কেটে গার্ডেলিং করার উপযুক্ত সময়। বেশি সবুজ গাছে গার্ডেলিং করায় নাইট্রোজেন ও কার্বনের সমতা বজায় রাখে বিধায় মুকুল বেশি আসে ।
ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ) : লিচুগাছে খয়েরি বর্ণের কুঁশিপাতা থাকলে সিকেচার দিয়ে কেটে বা ভেঙে ফেলতে হবে। এভাবে পিঞ্চিং করলে অধিক মুকুল আসে। স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ফ্লোরা ৩মিলি/১লি. পানিতে ও চিলেটেড জিংক ২ গ্রাম /১লি. পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।
জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) : মাইটস আক্রান্ত ডালপালা অপসারণ ও মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ৫০-৫৫টি/হেক্টর গাছের মাঝামাঝি বেঁধে দেয়া, ট্রাইকোগামা ৫০০০টি ডিম/হেক্টর ব্যবহার করতে হবে।
ফেব্রুয়ারি (মাঘ-ফাল্গুন) : কার্যকর পরাগায়নের জন্য মুকুলে ১০% ফুল ফোটার পর মৌবক্স ১০-১২টি/হেক্টর বসাতে হবে। কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে।
মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) : আগাম ফল ঝরে পড়া রোধ করার জন্য প্লানোফিলক্স, ফ্লোরা, সলুবোর বোরণ ইত্যাদি স্প্রে করতে হবে। গাছপ্রতি ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০-৩০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে। ফল মটরদানার মতো আকার হলে ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য নিমবিসিডিন স্প্রে করতে হবে ।
এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) : এসময় প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও হঠাৎ বৃষ্টির জন্য ফল ফেটে যায়। সলুবর বোরন ১ গ্রাম/লি. পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে। ফলের রঙ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত নিমবিসিডিন ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। বৃষ্টি না হলে পানি সেচ দিতে হবে। লিচুর গুচ্ছ ব্যাগিং করলে ফলের মান ভালো হয়।
মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) : এ সময় পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। সাধারণত মে মাসের ৩য় সপ্তাহে ফল পাকে। একটু ডালসহ ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে লিচুর থোকা সংগ্রহ করা উত্তম।
ফল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা : ফল সংগ্রহের পর সকল প্রকার শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে বিধায় সংগ্রহ পরবর্তী সেলফ লাইফ একেবারে কম অর্থাৎ সঠিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার অভাবে ফল দ্রুত পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে উৎপাদিত ফলের সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ করা হয় না তাই, প্রায় ২৫-৩০ ভাগ ফল বিনষ্ট হয়ে যায়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
লিচু সংগ্রহ : ফলের খোসার কাঁটা চ্যাপ্টা হয়ে যখন মসৃণ হয় এবং ফলের রঙ লালচে হয় তখন গাছে উঠে অথবা মই নিয়ে জালের তৈরি ঝুড়িতে করে লিচু সংগ্রহ করতে হয়।
প্রি-কুলিং : সংগ্রহের পর ফলের গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ফলের সতেজতা ধরে রাখতে নিম্ন তাপমাত্রা বজায় রাখা প্রয়োজন। প্রি কুলিং গাছের তাপ দূরীকরণে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে পলিথিন বা মাদুর বিছিয়ে যত্নসহকারে রেখে লিচু পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। নইলে লিচু শুকে উজ্জ¦লতা নষ্ট হয়ে যায়।
বাছাইকরণ : লিচুর গাদার চারপাশে বসে লিচু বাছাই করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে, রোগাক্রান্ত, পোকাক্রান্ত,              আঘাতপ্রাপ্ত, নষ্ট, ফেটে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক আকৃতির ফল বাছাই করে ফেলতে হবে।
ক্লিনিং/পরিষ্কারকরণ : ফলের সাথে লেগে থাকা মাটি, ময়লা ও অন্যান্য অনাকাক্সিক্ষত উপাদান (রাসায়নিক ও বালাইনাশক) থাকলে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
গ্রেডিং পদ্ধতি :  ফলের আকার আকৃতি, পরিপক্বতার পর্যায়, ফলের রঙ, ফলের ওজন অনুযায়ী (এ,বি,সি) বিভিন্ন গ্রেডে বিভক্ত করা হয়। মিশ্রিত অবস্থায় লিচুর থোকা বাঁধলে বাজার মূল্য কম হয়। গ্রেডিং করে থোকা  বাঁধলে আকর্ষণীয় হয় বলে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পায়। স্বল্পপরিমাণ খারাপ লিচু সমস্ত  ফলকে নিম্নমান করে ফেলে এজন্য গ্রেডিং পদ্ধতি লিচু চাষিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্যাকেজিং : ফলের সতেজতা ধরে রাখা, আঘাতজনিত ক্ষতি হতে রক্ষা ও নিরাপদ পরিবহণের জন্য প্রয়োজন ভালো প্যাকেজিং পদ্ধতি। বাংলাদেশে প্রচলিত প্যাকেজিং পদ্ধতি  মূলত বাঁশের টুকরী, চটের বস্তা ও পুরাতন  কার্টুন (যে গুলোতে  কোনো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে না ও কোন দৃঢ়তা নাই)। এ কারণে ফলের অপচয় ৪০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। ক্রেট্স বা ফাইবার বোর্ড কার্টুন ব্যবহার করা উত্তম।
বাজারজাতকরণ : লিচুর বাজার ব্যবস্থা একটু ভিন্ন রকম, কয়েক ধাপে লিচু বিক্রয় হয়। যেমন- ১. তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে লিচুর বাগান বিক্রয় হয়ে থাকে। ২. লিচু সংগ্রহ করার পর বাগান বিক্রয় হয়। ৩. লিচুর মুকুল আসার আগে পাতা দেখে গাছ/বাগান বিক্রয় হয়। ৪. মুকুল দেখে লিচু বাগান বিক্রয় হয়। ৫. লিচুর গুটি হতে পরিপক্ব পর্যন্ত ২-৩ বার বিক্রয় হয়। ৬. সর্বোপরি লিচু পাকার পর বিভিন্ন স্থানে লিচু ক্রয়-বিক্রয় হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে। এভাবে মধ্যস্বত্ব¡ভোগীরা প্রত্যেকেই লাভের জন্য হাত বদল করে বিক্রয় করে।
সংরক্ষণ : লিচু প্রক্রিয়াজাত করে  জ্যাম, জেলি, জুস, পুডিং, শরবত ও বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। এ ছাড়া লিচুর থোকা ডিপ ফ্রিজে রেখেও কয়েক মাস সংরক্ষণ করা যায়।
ফলন : লিচুর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১২.৪ মে. টন, তবে উত্তম পরিচর্যায় লিচুর ফলন ২২ মে. টন পর্যন্ত হতে পারে, যা পাবনা সদর উপজেলায় দাপুনিয়া ইউনিয়নের চর সাহাদিয়ার গ্রামের ২৫ জন কৃষক-কৃষানির মাঝে জরিপ করে পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, বছরব্যাপী উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো যথাসময়ে সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে মানসম্মত লিচুর উৎপাদন ও বাজারমূল্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। য়
উপসহকারী কৃষি অফিসার , উপজেলা কৃষি অফিস, পাবনা সদর, পাবনা। মোবাইল নং-০১৭১৭৪৬৬৯৯৮, ইমেইল-mazedul321@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon